উচ্চ রক্তচাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক এ সম্পর্কে বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ বিনয় ভূষণ বিণাকার কী বলছেন। 

আমাদের শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালনের জন্য হৃৎপিণ্ডের মধ্যে রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। এটি শরীরের ক্রিয়া অনুযায়ী এটি বাড়ে ও কমে। কিন্তু যদি রক্তচাপ বাড়ার পর সেটি না কমে, তাহলে এটি শরীরের জন্য সতর্কতার ডাক। উচ্চ রক্তচাপের জন্য হার্ট অ্যাটাক থেকে শুরু করে ফুসফুস, কিডনি এবং লিভার পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গ প্রভাবিত হতে পারে। । 

bp check up

হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন শুরু হওয়ার সাথে সাথে জীবন শুরু হয়, এবং হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে জীবন শেষ হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন চালু থাকে। হৃৎপিণ্ডের কাজ হল আমাদের শরীরের সব অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করা। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে দূষিত রক্ত ​​হৃৎপিণ্ডের ডানদিকে আসে এবং হৃৎপিণ্ড সেই রক্ত ফুসফুসে সঞ্চালন করে। ফুসফুসে রক্ত ​​পরিষ্কার হয়ে গেলে তা হৃৎপিণ্ডের বাম অংশে আসে এবং সেখান থেকে বিশুদ্ধ রক্ত ​​শরীরের সমস্ত অঙ্গে সঞ্চালিত হয়। এইভাবে হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেন এবং রক্ত ​​সঞ্চালন করে। 

heart attack

উচ্চ রক্তচাপ কী? (What is high blood pressure in Bangla)

শরীরের সমস্ত অঙ্গে রক্ত ​​সরবরাহের জন্য হৃৎপিণ্ডকে কিছুটা চাপ দিতে হয়। একে রক্তচাপ বলে। কখনও কখনও হৃৎপিণ্ডকে রক্ত ​​পেতে ছোট রক্তনালীগুলির উপর খুব বেশি চাপ দিতে হয় যা রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে। রক্তচাপ বেড়ে গেলে একে হাইপারটেনশন বলে। উচ্চ রক্তচাপ যদি দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায় এবং চিকিৎসা না করা হয় তাহলে সেটি হৃৎপিণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। হার্টের পেশী প্রসারিত হয়, যাকে লেফ্ট ভেন্ট্রিক্যুলার হাইপারট্রফি (left ventricular hypertrophy) বলা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হৃৎপিণ্ডের আকার বৃদ্ধি পায় এবং হৃৎপিণ্ড আর আগের মতো সঞ্চালন করতে পারে না। সময়ের সাথে সাথে হার্ট ফেলিওরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। 

হার্ট ফেলিওরের লক্ষণগুলির মধ্যে পরিশ্রান্তি, পা ফুলে যাওয়া বা একটু কাজ করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়া অন্তর্ভুক্ত। এই লক্ষণগুলি অনেকদিন ধরে থাকলে হৃৎপিণ্ডকে দুর্বল করে দিতে পারে। এটি হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীগুলিকেও প্রভাবিত করে যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। 

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অনেকদিন ধরে থাকলে ব্রেন স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, কিডনি ফেলিওর এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

heart problem

উচ্চ রক্তচাপের কারণ ও লক্ষণ (Causes and symptoms of high blood pressure in Bangla)

উচ্চ রক্তচাপের সঠিক কারণ জানা যায়নি। বংশগত কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ জানা যায়, যেমন কিডনির রোগ, থাইরয়েডের সমস্যা বা অন্যান্য এন্ডোক্রাইন সমস্যা। বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যে রক্তচাপ বাড়লে মাথা ঘোরে। তবে ১ থেকে ২ শতাংশ ক্ষেত্রে মাথা ঘোরার সমস্যা হয়ে থাকে। 

আজকাল কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিয়েছে। 

বর্তমান সময়ে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষভাবে করোনাভাইরাসের সময় অনেকের চাকরি চলে গেছে বা তাদের মজুরি কমে গেছে, তখন মানুষ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। এছাড়াও, লোকেরা শারীরিক কার্যকলাপ করছেন না, সবাই বসে বসে কাজ করছেন, খুব বেশি ফাস্টফুড খাচ্ছেন, যার ফলে স্থূলতা বাড়ছে। এই সব কারণে উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে। 

উচ্চ রক্তচাপ জনিত জটিলতা (Complications caused by high blood pressure in Bangla)

উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে প্যারালাইসিস, হার্ট ফেলিওর, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিওর ইত্যাদি হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে দৃষ্টিশক্তিও কমে যেতে পারে। 

এই সমস্যার কোনও সমাধান নেই তবে আমরা এটি হতে না দেওয়ার উপর মনোনিবেশ করতে পারি। তাই এই জটিলতাগুলি এড়াতে নিয়মিতভাবে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া জরুরি। 

উচ্চ রক্তচাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? (How to control high blood pressure in Bangla)

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে আপনার ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি। মানসিক শান্তির জন্য প্রাণায়াম, ধ্যান করা ইত্যাদি। এছাড়াও, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে ওষুধ খাওয়া উচিত। 

লোকেদের মনে যে প্রশ্নটি আসে তা হল আমার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে, আমি আর কেন ওষুধ খাব? তবে ডায়াবেটিসে যেমন ওষুধ খেলে আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওষুধ বন্ধ করলে সুগার বেড়ে যায়। একইভাবে, উচ্চ রক্তচাপ থাকার সময় ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আবার রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য নিয়মিত ওষুধ খাওয়া জরুরি। 

রক্তচাপ ১২০/৮০ এর মধ্যে গণনা করা হয়। ১২০ এবং ১৪০ এর মধ্যে থাকলে সেটি অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে, যদি রক্তচাপের সীমা ১৪০/৯০ ছাড়িয়ে যায়, রোগীদের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি ওষুধ খাওয়ার পর যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০ পয়েন্টে পৌঁছে যায় তাহলে আমরা ধরে নেব যে ওষুধটি কাজ করছে। 

কোনও দুঃখের খবর বা শারীরিক যন্ত্রণার কারণে রক্তচাপ বেড়ে গেলে ওষুধ খেতে দেওয়া হয় না। সমস্যার কারণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সেটি রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ হবে। 

healthy food

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য কী খাবেন? (What to eat to keep the heart healthy in Bangla)

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। আপনার ডায়েটে তেল ও মশলা কম ব্যবহার করুন। নিয়মিত ফল, সবুজ শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনার ডায়েটে প্রতিদিন স্যালাড যুক্ত করুন। এটি আমাদের পেট এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খান তবে অল্প পরিমাণে। কম কার্বোহাইড্রেট খেলে ওজন বাড়বে না। 

আপনার ডায়েটে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করুন। 

খুব বেশি নুন খাবেন না। 

যাদের হার্টের সমস্যা বা কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের কম নুন খাওয়াই ভাল। 

yoga

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ (Doctor’s Advice in Bangla)

আপনার ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করুন। খাদ্যের পরিমাণ করুন। তেল মশলা কমান। 

প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের সামর্থ্য অনুযায়ী শরীরচর্চা করুন। 

হৃদরোগ প্রতিরোধে মনের শান্তি জরুরি। তাই যোগ, ধ্যান ও প্রাণায়াম করুন। 

নিয়মিত ব্যবধানে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। আপনার যদি কোনও সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার নিয়মিত ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন।