Tanusree Deb Nath

ঘুম হলো আমাদের শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে ক্লান্ত মুক্ত রাখার উপায়। তাই ঘুমানোর স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। বেশি ঘুমানো সুস্থতার লক্ষণ নয়। স্লিপ হাইজিন মেনে চলার জন্য বেশ কিছু নিয়ম-কানুন আমাদের লক্ষ্য করা উচিত। এই নিয়ম কানুন গুলো মেনে চললে এগুলো একসময় অভ্যাসে পরিণত হবে এবং আমরা খুব সহজেই ঘুমানোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারব।

অনেকের সাধারণভাবে ঘুম আসে না বলে ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন যেটা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। তখন মানুষ ঘুমের ওষুধ ছাড়া ঘুমাতে পারে না। ঘুম হচ্ছে না বলে কখনো ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঘুমের ওষুধ সেবন করা যাবে না। পরিমিত পরিমাণ ঘুম না হওয়া বয়স ভেদে বিভিন্ন রোগের কারণেও ভিন্ন হতে পারে। অনেকে কোন মেডিকেশন নিলে বা চিকিৎসায় থাকলে ঘুমের সময়ের হেরফের হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর ডাক্তার রোগীকে সাহায্য করবেন স্লিপ হাইজিন মেনে চলার জন্য।

ঘুমের কিছু নিয়ম বিধি রয়েছে যাকে স্লিপ হাইজিন বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু নিয়ম বিধি মেনে চলার। এই নিয়মগুলো মানলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা কম থাকে। সঠিক নিয়ম মেনে নিয়মিত ঘুমালে শরীর রোগ মুক্ত থাকে।



স্লিপ হাইজিন এর নিয়ম কানুন:

১) প্রতিদিন চেষ্টা করবেন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে এবং ঘুম থেকে জাগতে। দিনে ঘুমানো পরিহার করতে হবে। এতে রাতে ঠিক সময়ে ঘুম আসেনা। যার ফলে ঘুমের কারণে দেহ ঘড়ি তে সমস্যা হতে পারে।

২) দিনের বেলায় না ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। দুপুরে আহারের পর 30 মিনিটের মতো বিশ্রাম নিতে পারেন।

৩) দিনের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যায়াম হাঁটাহাঁটি বা কাজ করুন। কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগে ভারী কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

৪) সব সময় চেষ্টা করবেন রাতের বেলা হালকা খাবার খাওয়ার। রাতের খাবার শেষ করার পর কিছু সময় ঘন্টাখানেক বিরতি নিয়ে ঘুমাতে যান। রাতে বেশি খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শাক জাতীয় খাবার রাতে খাবেন না এতে খাদ্য পরিপাকের সমস্যা হয়। সব সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

৫) দিনের শেষের দিকে চা কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।

using phone while sleeping


৬) ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে মুঠোফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা ডিজিটাল স্ক্রিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সময়ে আমরা দিনের বড় অংশ ব্যয় করি মোবাইল, কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রের পেছনে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেই ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের স্ক্রিনে ঘোরাঘুরি বন্ধ করতে হবে। রাতের বেলা অন্ধকারে মোবাইলের নীল আলো চোখের রেটিনার মারাত্মক ক্ষতি করে।

৭) শোবার ঘরে আলো বাতাসের যথেষ্ট চলাচল থাকতে হবে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে ঘর গন্ধ হয়ে যায়। একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর শোবার ঘরের জিনিসপত্র সূর্যের আলোতে শুকাতে দিন এতে জিনিসপত্র ঠিক থাকে।

৮) বিছানা বেশি শক্ত বা নরম যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উঁচু বা শক্ত বালিশ ব্যবহার করলে অনেক সময় ঘাড়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৯) ঘুম না পেলে অকারণে শুয়ে থাকা ঠিক নয়। একটু উঠে ঘরে হাঁটাহাঁটি করুন, বই পড়ে কিছু সময় পার করুন। যদি জোর করে শুয়ে থাকেন তাহলে অস্বস্তি বাড়বে।

১০) সারাদিন প্রচুর কাজ করার সময় আমাদের ঘাম হয়। প্রচুর ঘাম হলে আমাদের দেহ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অনেকের মাথা ব্যথা, হাত-পা ঝিমানো শুরু হতে পারে। এতে জলপান এর বিকল্প নেই। সম্ভব হলে এক ঘন্টার মতো হালকা ঘুমিয়ে নিলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।

reading books



মানুষ ভেদে মানুষের অভ্যাস গুলো আলাদা হয়ে থাকে। কেউ বলে রাতে বই পড়লে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে আবার কেউ বলে দিনের বেলা হালকা ব্যায়াম অথবা গোসল বা স্নান করলে রাতে তাদের ভালো ঘুম হয়। এমন অভ্যাসগুলো শরীরের জন্য ভালো। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় গরমকালের প্রচণ্ড গরমে মানুষের ঘুম কম আসে। সেক্ষেত্রে শোবার ঘরটা নীরব এবং ঘরের এক কোণে শীতল যুক্ত স্থানের নির্বাচন করতে হবে। তাতে ঘর শীতল থাকে এবং গরমকালে ঘুমের কোন সমস্যা হবে না।

মনে রাখতে হবে রাতের ঘুম মানুষের বিশ্রাম এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করার প্রধান উপায়। শরীরকে ক্লান্তহীন ও সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা sleep schedule এর উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। আপনি উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে এগুলো আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে এবং আপনার অনিদ্রর খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।