Tanusree Deb Nath

শিশুকে কেন বুকের দুধ খাওয়ানো দরকার?

শিশুর সার্বিক বিকাশ এবং সুস্থভাবে গড়ে উঠার জন্য মায়ের বুকের দুধ প্রয়োজন। নবজাতকের জীবনের প্রথম সময়ে মায়ের বুকের দুধের তুলনা নেই। প্রতিবছর ১ থেকে ৭ আগস্ট “World Breastfeeding week” পালিত হয় যেখানে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব নিয়ে প্রচার ও প্রসার করা হয়। শিশুকে শারীরিক-মানসিক এবং সুস্থ ভাবে ভবিষ্যত জীবনযাপন করতে হলে মায়ের বুকের দুধ আবশ্যক।

কত বছর বয়সে বুকের দুধ খাওয়াবেন?

বুকের দুধ নবজাতকের প্রধান এবং পরিপূর্ণ খাদ্য। WHO এর তথ্য মতে জন্মের প্রথম ছয় মাস বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে হবে। ছয় মাসের পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে। সাধারণত মায়ের বুকের দুধ বাচ্চার ২ বছর বয়স পর্যন্ত খাওয়ানো যেতে পারে। এছাড়াও বুকের দুধ খাওয়ানোর কিছু পদ্ধতি আছে। নর্মাল বা সিজারিয়ান ডেলিভারি মায়েদের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি গুলো ভিন্ন হতে পারে।

মায়ের বুকের দুধের গুরুত্ব

শিশুর জন্মের পর মুহূর্তে মায়ের বুকে গাঢ় হলুদাভ অনেকসময় বর্ণহীন যে দুধ উৎপন্ন করে তাকে মেডিকেলের ভাষায় কলোস্ট্রাম (Colostrum) বা শালদুধ বলে। বাবা-মা এবং পরিবারের সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে নবজাতক শালদুধ পেয়ে থাকে। গুরুত্ব পূর্ণ পুষ্টি উপাদান যেমন অ্যামাইনো- এসিডযুক্ত প্রোটিন, ফ্যাট, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন, খনিজ ও বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকে যা বাচ্চাদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সকল খাবারের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।


বুকের দুধের উপকারিতা

মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা শিশুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য। গবেষণায় বলা হয়েছে শিশুর জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ালে ২২ শতাংশের মতো শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। মায়ের বুকের দুধে শিশুর নির্মোক্ত উপকারিতা লাভ হয়ঃ
– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
– এলার্জি থেকে রক্ষা করে
– হাড় এর বিকাশ ঘটায়
– শিশুর বাড়তি খাবারের প্রয়োজনীয়তা কম থাকে
– দুধের ফ্যাটি এসিড নবজাতকের মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে
– শিশু শরীরে ওজন লাভ করে তথা শিশুর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে।



কেন মায়েরা বুকের দুধ খাওয়াবেন?

বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের শরীরে উপকার পাওয়া যায়। যেমন: মায়ের প্রসব পরবর্তী রক্তপাতের আশঙ্কা কমায়, মায়ের স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, মায়ের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে, মায়ের জরায়ু স্বাভাবিক আকারে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। এছাড়া মায়েরা যদি কোনো জটিল রোগ এ ভোগেন যেমন: ক্যান্সার বা এইডস তাহলে দুগ্ধ পান করান ঠিক নয়।

করোনা মহামারী আসার পর থেকে আক্রান্ত মায়েরা দ্বিধায় ছিলেন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো ঠিক হবে কিনা? বিশেষজ্ঞদের মতে করোনায় আক্রান্ত মায়েদের দুধের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া মায়ের দুধে কিছু উপাদান যেমন এন্টিবডি, এপিডারমাল গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কোন মা করোনা আক্রান্ত হলেও বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং শরীরের সংস্পর্শে রাখতে হবে। সতর্কতাঃ হিসেবে মায়েদের মাস্ক পড়তে হবে এবং বাচ্চাকে ধরার আগে ও পরে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে।